Social Bar

‘আছিয়া মরিয়া গিয়া প্রমাণ করিল সে বাঁচিয়া গিয়াছে।’

   ‘আছিয়া মরিয়া গিয়া প্রমাণ করিল সে বাঁচিয়া গিয়াছে।’


 শিরোনামটি  দেখে খুব অবাক হয়েছেন?রসিকতা করছি আমি ? হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, নির্মম রসিকতাই বটে। কিন্তু কেনো আমি এই শিরোনামে  কিছু লিখেছি, তার ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই লেখাটিতে পাবেন। ততক্ষণ সকলকে পুরো লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

মাত্র কিছু দিন হলো এক পাষন্ড-পশুর পাশবিক লালসার  শিকার হয়ে আছিয়া নামের  স্বর্গীয়-শিশুটি সীমাহীন কষ্ট ভোগ আর বুকভরা অভিমান নিয়ে অবশেষে মৃর্ত্যু বরণ করে। ডাক্তারদের প্রানান্তকর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে স্বর্গের এই শিশুটি স্বর্গেই প্রস্থান করে ।    শিশুটিকে আমরা পৃথিবী নামক স্বর্গে! থাকতে দিলাম না -মেরে ফেললাম এবংআট বছরের ঐ  স্বর্গীয়-শিশুটির করুণ মৃত্যু আমরা অসহায়ের মতো প্রত্যক্ষ করলাম! সকল প্রচার মাধ্যমে তার সচিত্র করুণ বর্ণনা দেখে এবং পড়ে দেশের কোটি মানুষ কেঁদেছে। কিন্তু ঐ,...ঐপর্যন্তই……। এরপরে আর আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না,মানব নামের ঐ দানবদের লালসার শিকার হয়ে আর কোনো দ্বিতীয় আছিয়ার এরকম করুণ মৃর্ত্যু ঘটবে না। কারণ ইতোপূর্বে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এ’রকম বহু শিশুর করুণ মৃর্ত্যু জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু মৃর্ত্যুর মিছিল থামে নাই। থামে নাই ধর্ষন নামের পাশবিক উন্মত্ততা?এমনকি আমি যখন এই লিখাটি লিখছি, তখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্ষণ নামের পাশবিক উন্মত্ততারএকাধিক খবর আমাদের কাছে আসছে।


কেনো থামে নাই ধর্ষনকান্ড?কেনো বিচার হয় নাই এই স্বর্গীয় শিশুসহ অসংখ্য নিরীহ-নিরপরাধ কিশোরী-তরণী নারীদের ধর্ষক নামক পশুদের? তার একাধিক কারণ নিশ্চয়ই আছে।এই কারণগুলো খুঁজতে গেলে পঁচে যাওয়া এই সমাজের ঘৃণ্য-অশ্লীল চিত্রই আমাদের সামনে ভেসে উঠবে। কি সেই চিত্র? আমি ধর্মতত্ত্ববিদ বা সমাজবিজ্ঞানী নই, তথাপিও আমি আমার জ্ঞান ও বুদ্ধিতে যতটুকু উপলব্দি করতে পেরেছি, তাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।যা’একান্তই আমার নিজস্ব ভাবনা ও মতামত। প্রথমতঃ সুবিচার  প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন  ন্যয়পরায়ন বিচারকসহ পক্ষপাতমুক্ত বিচার ব্যবস্থাও বিচার কার্যের সাথে জড়িত সশ্লিষ্ট সকল মহলের সততাও ন্যয়পরায়নতা।কিন্তু সততা ও ন্যয়পরায়নতার নজির স্থাপন করার মতো যোগ্যতা কি আমরা অর্জন করতে পেরেছি ? যোগ্যতার সংজ্ঞা কি আমাদের কাছে স্পষ্ট? আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় যোগ্যতা বলতে -তো  কেবল আমাদের শিখিয়েছে, পরীক্ষায় পাশ ও A+ পেয়ে উপরের শ্রেণিতে প্রমোশন লাভ ও যেন-তেন প্রকারে একটি চাকুরী প্রাপ্তি ও তথায় নানা অপকৌশলে প্রমোশন অর্জন। ন্যয়পরায়নতা,সততা,উদারতা, মানবিকতাও অপরের প্রতি দরদ ও মমত্ত্ববোধের জাগরন ঘটানোই যে “যোগ্যতা” সেই “যোগ্যতা” অর্জনের কোনো ব্যবস্থাতো আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় নেই।”Ethics in Education” তো আমাদের শিক্ষা-বাবস্থায় একেবারেই উপেক্ষিত একটা বিষয়। স্বার্থপরতা,অসততা,আত্নকেন্দ্রিকতা নিয়েই তো আমাদের বেড়ে উঠা। সুতরাং নীতিবোধকে বিসর্জন দিয়ে বিচার কার্যে প্রভাবশীল ক্ষমতাধর ও অসৎ রাজনীতিবিদদের অযাচিত হস্তক্ষেপ,স্বজন-প্রিয়তা,নানা আর্থিক প্রলোভন ও উৎকোচ গ্রহণ করে বড়লোক হবার উৎকট বাসনা যেখানে প্রবল থাকবে,সেখানে বিচারের বাণী-তো নিরবে-নিভৃতেই কাঁদবে।ফলে আছিয়া,তনুর মতো  শত-সহস্র শিশু, কিশোরী, তরুণীর স্বপ্ন, তাদের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল সুন্দর ভবিষ্যৎ ও স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ শুণ্যে মিলিয়ে ধূলিষাৎ হয়ে যাবে-এটা আর বিচিত্র কি? বিশেষ করে শিক্ষার মূল লক্ষ্যই যখন অন্যকে দলিত-মথিত,অবদমিত করে হলেও নিজে বেঁচে থাকতে হবে এবং যে ভাবেই হউক নিজের উঁচু অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তাতে অন্যে কষ্ট পাক,তাদের অধিকার ক্ষুন্ন হউক অথবা তাদের জীবন তছ-নছ হয়ে যাক- এটা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়!


হায়! আমরা নাকি সভ্য? আমরা নাকি সভ্য সমাজের বাসিন্দা। আমরা কেমন সভ্য সমাজের বাসিন্দা  তা’ নিম্ন বর্ণিত পরিসংখ্যান থেকেও স্পষ্ট হয়ে যায়।


২০২০-২০২৫ সালে Jago news.24 পত্রিকার ১৪ মার্চ, ২০২৫-এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে ১১,৭৫৮ জন নারীও মেয়ে শিশু ঐ সময়ে নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।এদের মধ্যে ৬৩০৫ জন মেয়ে শিশু ধর্ষিত। ধর্ষিতদের মধ্যে ৩৪৭১ জনের বয়স ১৮ এর নিচে, -যা’ মোট ধর্ষণ ঘটনার ৪৫% এর ও বেশি।এই ৫ বছরে  সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৮৯ জন নারী ও শিশু এবং যৌন সহিংসতার পর হত্যা করা হয়েছে ২০৭ জনকে-এদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু। আরো ভয়াবহ  চিত্র হচ্ছে ৫০জন নারী ও মেয়ে শিশু যৌন সহিংসতার ভয়াবহ ট্রমা সহ্য করতে না পেরে আত্বহত্যা করেছেন। অতি সাম্প্রতিক সময়ে গত দুই মাসে (ইত্তেফাক রিপোর্ট) ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতিত, এদের মধ্যে ৯৬ জন ধর্ষিত।ধর্ষিতদের মধ্যে ৮৫% অর্থাৎ প্রায় ৮২ জন শিশু।

  

  এই তথ্য ও পরিসংখ্যানগুলো কোনো ভৌতিক বিষয় নয়, একেবারে বাস্তব চিত্র। চিন্তা করুন,যে সমাজে দুই মাসে ৮২ জন স্বর্গীয় “শিশু” ধর্ষিত হয় (পরিসংখ্যানের উপরের অংশটুকু বাদই দিলাম) সেই সমাজটাকে সভ্য সমাজ বলতে হবে?অসভ্য সমাজ তাহলে কোনটা?


নারীর প্রতি সহিংসতা,যৌতুক, বাল্যবিবাহ,যৌন হয়রানি,এসিড নিক্ষেপ,ধর্ষনও হত্যাকান্ড যারা ঘটিয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছেন, তারা কি কোনো ভিন-গ্রহের বাসিন্দা?তারা কি এই সমাজের বাসিন্দা নয়? যদি এই সমাজের বাসিন্দা হয়,তাহলে এই সহিংসতা নিরসনে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাষ্ট্রের ভূমিকা কি? সামাজিক ও পারিবারিক ভূমিকা কি?হ্যাঁ কোনো একটা ঘটনা ঘটলে মানব-বন্ধন,বর্ক্তৃতা-বিবৃতি,প্রতিবাদ-সমাবেশ,হৈ-চৈ কিছুদিন খুব জোরে-সোরে চলতে থাকে।তারপর সব শেষ! কেনো এই পৈশাচিক ঘটণাগুলো ঘটছে,তার মূলে আমরা যেতে চাই না।তার কারণ উৎঘাটন করে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা আমরা করতে চাই না।বস্তুতঃ আমরা ঘটণার দ্বারা  সহজে নিয়ন্ত্রিত হই, কিন্তু ঘটণাকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বনিতে পারি না।


যৌন নিপীড়নে তনু ও আছিয়া হত্যাকান্ডসহ আমাদের কাছে নিকট অতীতের যত পরিসংখ্যান আছে, তাতে কয়টিতে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?কয়টিতে ভিকটিম পরিবার সুবিচার  পেয়েছে? আমাদের বিচার ব্যবস্থার কর্ণধারগণ কি তার কোনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দেখাতে পারবেন? নানা আর্থিক সুযোগ-সুবিধাও নগদ-নারায়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশায় যেখানে বিচারের নামে জুলুমকে প্রতিষ্ঠা করা হয়,সেখানে হিটু শেখের মতো শত-শত ধর্ষক তৈরি হলে কি তা’ খুব অস্বাভাবিক হবে?

 

নারীর প্রতি এই সহিংসতা,শুধুমাত্র  যে বিচার বিভাগের বিচারিক কার্যের অসাধুতা,বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা ও আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণেই সংঘটিত হচ্ছে-তা  একচেটিয়া বলবার সুযোগ নেই ।বরং এর সাথে আরো যুক্ত করা যায়,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা,ছেলেদেরকে মেয়েদের তুলনায় অধিক গুরুত্ব দিয়ে মেয়েদের অধিকার ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা, লিঙ্গ সমতা ও বাল্য বিবাহের মতো বিষয়গুলোকে। বস্তুতঃ মেয়েদের প্রতি সম্মানজনক আচরনের ক্ষেত্রে আমরাএখনো উদার মানসিকতার পরিচয় দিতে শিখিনি।অপরদিকে digital মাধ্যমগুলোতে যৌনতা ও পর্ণোগ্রাফির সহজলভ্যতার কারণে হতাশাগ্রস্ত তরুণ সমাজ বিপদগামীতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।


কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হলো,প্রকৃত শিক্ষার অভাববস্তুতঃ ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির ‘শাশ্বতঃ রূপ ও এর ক্লাসিক্যাল আবেদন’  সম্পর্কে সর্বসাধারণে নূন্যতম কোনো ধারণাও নেই।ফলে শিক্ষা অর্জনের সুমহান লক্ষ্য ও আদর্শগুলো এখন তথাকথিত শিক্ষিত -অশিক্ষিত  নির্বিশেষে প্রায় সকলের নিকটই একপ্রকার value less values.


 প্রচলিত ও ট্রাডিশন্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায়,মানুষ শিক্ষাকে কেবল জাগতিক ও বস্তুগত চাহিদা পূরণের মাঝেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।জাগতিক ও বস্তুগত চাহিদা পূরণেরপ্রয়োজন অবশ্যই আছে,কিন্তু তা’ আবশ্যকীয়ভাবে। কিন্তু এটাকেই শিক্ষা অর্জনের একমাত্র এবং একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমজনতার মধ্যে উচ্চ চরিত্র বল সৃষ্টি,আত্নশক্তি ও যেকোনো কঠিনও দুঃসহ পরিস্থিতিতে আত্ননিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা অর্জন,আত্নবিশ্বাস,ন্যয়পরায়ণতা,সততা, সাহস,বিনয়, আনুগত্য,ভদ্রতাবোধ, দয়া, ক্ষমা,ত্যাগ,মহানুভবতা,সহমর্মিতা,মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ দরদ ওপ্রেম,মানবিকতা-মানবিক এই মূল্যবোধগুলো অর্জন শিক্ষার এখন আর কোনো  অপরিহার্য বিষয় নয়।কেবল উপরের শ্রেণিতে প্রমোশন লাভ আর কোনো রকমে একটি চাকরী প্রাপ্তির আশা ব্যাতীত কেউ আর এখন উপর বর্ণিত quality গুলো অর্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করে না।ফলে নগদ ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তি ও বস্তুগত ফায়দা অর্জনের উর্ধ্বে উঠে মানুষের অধিকার রক্ষা ও মানুষকে বাঁচাবার  জন্য মানবিক মূল্যবোধগুলোর পরিচয় দিতে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।


আমি হলফ করে বলতে পারি,যদি কোনো একজনের জন্য এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে,তার কোনো অন্যায়-অপকর্ম ও দূর্নীতির জন্য তাকে কখনোই জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাড়াতে হবেনা,কোনো cc ক্যামেরা তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে না,তাহলে এযাবৎকাল সে যে ‘শিক্ষায়’(তথাকথিত) শিক্ষিত হয়ে নিজেকে সভ্য বলে দাবী করে আসছে,সেই সভ্যতার দাবিতেই  সে নিজেকে কতটুকু সভ্য হিসেবে মেলে ধরতে পারবে? নিশ্চয়ই সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষবস্তুতঃ আমি পূর্বেই বলেছি, ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির ‘শাশ্বতঃ রূপ ও এর ক্লাসিক্যাল আবেদন’  সম্পর্কে সর্বসাধারণে নূন্যতম কোনো ধারণাও নেই। শিক্ষার নান্দনিক দিকটা এখানে একেবারেই উপেক্ষিত একটি বিষয়। ফলে জবরদস্ত নামাজিও অন্যায়-অপকর্ম ও দূর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত।    


এবারে  ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে চাই। আমাদের ধর্মতত্ত্ববিদ ও ধর্মপ্রচারকগণ  নারীদের কেবল বেপর্দায় চলা- ফেরা করা,short ও উগ্র পোষাক পরিধান করে যত্র-তত্র ঘুরে বেড়ানো, নারী ও পুরষের কর্মক্ষেত্র ভিন্ন না হওয়া, সামাজিক ও প্রচার মাধ্যমগুলোতে নারীদেরকে ভোগ্য-পণ্য হিসেবে প্রচার করানোর মতো বিষয়গুলোকেই ধর্ষণ কর্মকান্ড সংঘটিত হওয়ার একমাত্র কারণ বলে মনে করেন।এর সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু শুধুমাত্র এগুলোর কারণেই ধর্ষণ কর্মকান্ড  এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে-তা বলবার সুযোগ নেই।আমাদের ধর্মতত্ববিদগণ ধর্ষণসহ নারী সহিংসতার কর্মকান্ডকে কেবল কিছু ধর্মীয় বিধি-বিধান দ্বারা রোধ করতে চান।খুবই ভালো কথা।অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় বিধি- বিধান পালন অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে,কোরানে হাফেজ ও মসজিদের ইমাম দ্বারাও নারী শিশু ধর্ষিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কয়টার খবর আর প্রচার মাধ্যমে আসে।আমি যখন এই লিখাটি লিখছি,তখনো সিলেটের কোনো এক মসজিদে নারী শিশু ধর্ষিত হওয়ার খবর এসেছে।এখানে ধর্মীয় অনুশাসন কি খুব একটা কার্যকরী হয়েছে।তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি,ধর্মীয়  অনুশাসন ও ধর্মীয় বিধি- বিধান পালনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে জ্বিনা-ব্যভিচার রোধ হয়তো সম্ভব। কিন্তু গোপন পাপে বাধা দিবে কে?


মূলতঃ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ‘খন্ডিত ও বিকৃত বিশ্বাস’কেই আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে চালিয়ে ধর্মের শাশ্বতঃ রূপকে মহিমান্বিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের মাথায় রাখতে হবে,

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তার প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষা,আমাদের প্রচলিত ধর্মীয় বোধ-বিশ্বাস,ও আচরিত নানা ধর্মাচার “মহাগৌরবের এই মহাদায়িত্বের” বিষয়টি আমাদের অন্তরে  উপলব্দিযোগ্য করে তুলতে পারেনি বিধায়, আমরা কেবল আমাদের জন্য কতক ধর্মীয় বিধি-বিধান ও আইন -কানুনকেই আমাদের জন্য অপরিহার্য করে ফেলেছি।আমাদের বুঝতে হবে, যেহেতু মহান আল্লাহ্‌ আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে কেবল আমাদেরকে তথা মানুষকে তথা “Man” কে “তার” “প্রতিনিধি” হওয়ার মহাসৌভাগ্য দান করেছেন তথা “তার প্রতিনিধি” হওয়ার মতো গৌরবে গৌরবান্বিত করেছেন, সতরাং সেই গৌরব রক্ষার্থে অথবা তার যোগ্য প্রতিনিধি হওয়ার জন্য যেই-ই “মনুষ্য” নাম তথা “Man” নাম  ধারণ করবে সেই আবশ্যকীয়ভাবে এই ‘Man’  এর ‘M’ -মানে ‘Morality’,’A’- মানে ‘Ability’ এবং ‘N’-মানে ‘Nobility’ -এই নূন্যতম যোগ্যতাগুলো  অর্জন করে নেবেই।নিতে হবেই। নতুবা সে মহান স্রষ্টার প্রতিনিধি হবে কিভাবে?


হায় মনুষ্য!সে যে স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে এসেছে, স্রষ্টার প্রতিনিধি হতে হলে তাকে যে মহা কিছু কোয়ালিটি অর্জন ও যোগ্যতা ধারণ করতেই হবে - এই  বোধটুকুই মনুষ্যের মধ্যে জাগ্রত হয় না। জীবন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ঐ বিশেষ  quality ও যোগ্যতা অর্জন আর তার হয়ে উঠে না।বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রেসিডেণ্টের প্রতিনিধি হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে যদি আমেরিকার রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়, তাহলে কি সবচাইতে অযোগ্য লোকটাকেই নির্বাচন করা হবে? নাকি প্রেসিডেণ্টের কোয়ালিটি যে ধারণ করে তাকেই নির্বাচন করে পাঠানো হবে? তাহলে বিশ্ব-স্রষ্টা  মহান আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি যারা হবেন, তারা তো স্বভাবগতভাবেই আল্লাহ কিছু কোয়ালিটি ধারণ করবেনই। কিন্তু সেটা আগে অন্তর থেকে উপলব্দি করতে হবে যে, আমি স্রষ্টার প্রতিনিধি। আল্লাহ্‌ পাক ভাল করেই জানেন, আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে কেবল মনুষ্য জাতিই তার প্রতিনিধিত্ব পালনের সক্ষমতা রাখে। হায়!জীবনের শেষ সময় অবধি অতিক্রান্ত হয়ে যায়,মনুষ্য কেবল ধর্মীয় কিছু বিধি-বিধান,আচার- অনুষ্ঠানের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবব্ধ করে রাখে - স্রষ্টার প্রতিনিধি হয়ে উঠা আর তার হয় না।। সভ্য হয়ে গেছে--তা দেখবার জন্যই কতক ধর্মীয় বিধি- বিধান ও আচার -অনুষ্ঠান পালনের  মহড়া চালায় মাত্র।আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আল্লাহতে যাদের বিশ্বাস আছে,অন্তত ঈদগাহে যেয়ে বছরে একবার হলে ও যারা নমাজ আদায় করে,তারা ঘুষ খায় কি করে? দূর্ণীতি করে কি করে- এই মহা ভন্ডামির শেষ কোথায়?


আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,কোনো বিশেষ ধর্মীয় বিধি -বিধান যদি আল্লাহ্‌পাক আমাদের জন্য নাও দিতেন, তথাপিও মানুষকে যেহেতু তিনি তাঁর প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সেই মহা গৌরব রক্ষার্থেই মানুষ যে কোনো বিশেষ পরিস্থিতে আত্নশাসনের মাধমে আত্ননিয়ন্ত্রণ করে  নিজেকে বিজয়ীবীরের ভূমিকায়  অবর্তীর্ন করতে সক্ষম হতেন।যেটা হযরত ইউসুফ (আঃ) জুলেখার কুপ্রস্তাবকে নাকচ করে  দিয়ে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, মহাস্রষ্টার  প্রতিনিধির দায়িত্ব নিয়ে যারা পৃথিবীতে এসেছেন/আসবেন-এরকম কঠিনপরিস্থতিতেও আত্ননিয়ন্ত্রন  করার মাধ্যমে মহাস্রষ্টার মহাগৌরব রক্ষা করতে তারা সমর্থ হন/হবেন। নতুবা আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার কোনো যোগ্যতাই কোনো মাখলুকাতের থাকার কথা নয়। আমাদের বুঝতে হবে, ধর্মীয় বিধি-বিধানগুলোএকটি ‘মোড়ক’ বা ‘আবরন’ বা ‘ঢাকনা’ মাত্র। এটাই সব নয়। একটা ভালো পুস্তক তৈরি করা হলো, কিন্তু তারএকটি কভার পেজ  বা মোড়ক তৈরি করা হলো না, এটা কি  করে হয়?পুস্তকের ভিতরের অমূল্য রত্ন-রাজি রক্ষা করার জন্যই তো কভার পেজ আবশ্যক?  আল্লাহ-পাক আমাদের জন্য সেই কভার পেজটিই মূলতঃ বিধি-বিধানের আদলে তৈরি করে  আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন, কিন্তু এটাই সব নয়। আমাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি হওয়ার  বা হয়ে উঠার জন্য নূন্যতম যোগ্যতাগুলো (বৃহত্তর পরিধিতে আরো উচ্চতর যোগ্যতা)  থাকলেই তো নানা বিধি- বিধান, তথা মোড়ক তথা কভার পেজ আমদের জন্য অপরিহার্য-, ওগুলো স্থায়ীভাবে রক্ষা করার জন্য।তো আমরাতো পুস্তকই তৈরি করলাম না,তাহলে কোন রত্নাবলীকে ঢাকার জন্য আমদের কভার পেজ তথা ধর্মীয় বিধি- বিধান আবশ্যক? বস্তুতঃআমরা পুস্তকের রত্নাবলী তথা জীবনের যোগ্যতা ও গুণাবলী অর্জন না করেই শুধু ‘কভার পেজ’ তথা নানা ধর্মীয়  বিধি -বিধান, আইন-কানুনে  নিত্য শান দিয়ে ভাবছি,সবকিছু ঠিক-ঠাক আছে। মুক্তি মিলবে ইনশাল্লাহ্‌।হায় মনুষ্য! কবরের অপর প্রান্তে পৌঁছে অবধি জীবন তার শেষ হয়ে যায়,কিন্তু ‘জীবনের যোগ্যতা ও গুণাবলী’ তথা স্রষ্টার প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের কোনো তাড়নাই মনুষ্যহ্নদয়ে  জাগ্রত হয় না।!শুধু ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের নামে নিত্য অর্থহীন-অনুষ্ঠানের মহড়া চালায়।হায়! স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে যারা নিত্য নমাজে স্রষ্টাকে সিজদা দেয়, জীবন ভর কিন্তু তারা স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টি ‘মানুষকে’ কষ্ট দিয়ে বেড়ায়!-কিরূপে সম্ভব?



প্রকৃত অর্থে,ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির খন্ডিত ও বিকৃত বিশ্বাসকেই আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে চালিয়ে যাচ্ছি এবং আত্নশুদ্ধির কোনো প্রচেষ্টা না করেই স্রেফ কতগুলো বিধি বিধানের মহড়া চালিয়ে আত্নতৃপ্তির ঢেঁকুর উঠাচ্ছি, আর ভাবছি এভাবেই মুক্তি মিলবে।তথাকথিত একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত সম্প্রদায় যেমন ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির ‘শাশ্বতঃ রূপ ও এর ক্লাসিক্যাল আবেদনগুলো উপলব্দি করতে ব্যর্থ  হয়েছেন,আমাদের ধর্মীয় পথ- প্রদর্শকরাও তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির খন্ডিত ও বিকৃত বিশ্বাসকেই মূল উপজীব্য বানিয়ে এবং -তা’ ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে চালিয়ে ধর্মের শাশ্বতঃ রূপকে  মহিমান্বিত করতে ব্যর্থ  হচ্ছেন।আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, মসলমানরা  প্রাত্যহিক জীবনে যেভাবে ধর্মচর্চা করছেন, কেয়ামত পর্যন্ত ও যদি এই প্রক্রিয়া  অব্যাহত রাখেন -তারা আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে উঠার যোগ্যতা  কখনোই অর্জন করতে  সক্ষম হবেন না।


  একজন সাধারন অঘা-উল্লুককেও যদি আমেরিকার রাষ্ট্রদূত(অর্থাৎপ্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি) হিসেবে নির্বাচন করা হয়, সেও একটু নড়ে-চড়ে বসবে এবং তার মধ্যেও কিছুটা চেতনার সঞ্চার হবে যে, প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে তো তাকে কিছুটা যোগ্যতা অর্জন করতেই  হবে।কিন্তু হায় মানুষ!বিশ্ব-সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বিশ্ব-সৃষ্টিকর্তার  প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করলেন (চাট্টিখানি কথা নয়, বিশ্বস্রষ্টার প্রতিনিধি! জাগতিক কোনো প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি নয়) আর মনুষ্য তার গৌরব রক্ষা করা তো দূরের কথা বরংঅন্তরকে স্পর্শহীন কিছু প্রার্থনার(ধর্মীয় কতক বিধি-বিধান) নামে মহান স্রষ্টার সাথে মানুষ রীতিমত তামাশা (নাউজুবিল্লাহ) শুরু করে দিল। নতুবা ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনকারী অধিকাংশ মানুষ জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই  মন্দপন্থা অবলম্বন করে আল্লহর  প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে কষ্ট দেয় কিভাবে?তারপ্রতিনিধি হওয়ার গৌরবকে কলঙ্কিত করে কিভাবে? পরম বিষ্ময়ের বিষয় হচ্ছে কেতাদূরস্থ একজন নামাজী- হাজী অনবরত ঘুষ খেয়ে আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে অনবরত  কষ্ট দিচ্ছেন। এটা কি করে সম্ভব? এগুলো আল্লাহর সাথে তামাশা ছাড়া আর কি?


আমি পরমভাবে বিশ্বাস করি, মানুষ যেদিন অন্তর দিয়ে উপলব্দি এবং বিশ্বাস করবে বিশ্বস্রষ্টা তাকে বিশ্বস্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করে তাকে মহাগৌরবান্বিত করেছেন,সেদিন সে হজরত ইউসুফ আঃএর মতো মহাব্যক্তিত্বসম্পন্ন নায়কের ভূমিকায় অবর্তীর্ন হয়ে দৃঢ় চারিত্রিক শক্তির মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।এইজন্য নারীদের আলাদা কর্মক্ষেত্র, তাদেরকে নাক-মুখ ঢেকে একেবারে বোরকাচ্ছাদিত হয়ে  চলাফেরা করার তথাকথিত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির অপরিহার্যতা অনাবশ্যক হবে। অবশ্য রুচিশীল পোষাক নারী -পুরুষ সকলের জন্যই অপরিহার্য। পবিত্র কোরান মজিদে আল্লাহ-পাক তার তাগিদ ও দিয়েছেন।আমি  বিশ্বাস করি, ধর্মের শ্বাশ্বত যে আবেদন,সৌন্দর্য ও স্পিরিট -জীবনকে সর্বাঙ্গীনভাবে বিকোশিত করে মহান স্রষ্টার যোগ্য দাস হওয়া-এই চেতনা যদি মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল  হয়ে যায় এবং এমতাবস্থায় আল্লাহর কোনো নিয়ামতের বান্দার সম্মুখে, আল্লাহর অনুপম সৃষ্টি কোনো নারীকে যখন কোনো বদমায়েশ-পশু ধর্ষনের চেষ্টা করেএবং তার বস্ত্র হরণ করতে উদ্যত হয়,সেই মূহুর্তে আল্লাহর ঐ নিয়ামতের বান্দা নিজের পরিধেয় পোশাক ঐ নারীর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে তার সম্ভ্রম রক্ষা করে তাকে উদ্ধার করবে এবং মহান প্রভুর উদ্দেশ্য আরজ  করবে“হে আমার প্রভু, তুমি আমাকে তোমার প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছ,তোমার প্রতিনিধি হবার যোগ্যতা আমার নেই,কিন্তু তুমি আমাকে  সম্মানিত করেছো, তোমার সেই গৌরব আমি রক্ষা করার চেষ্টা করেছি,পেরেছি কিনা - জানিনা-তুমি আমায় ক্ষমা করো “ ।প্রকৃত ধর্মাচারণের নির্যাস হবে -এরকম মহাদৃষ্টান্ত স্থাপন করা।


পুরুষ নারীকে দেখা মাত্রই ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর মতো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে,ফলে নাক -মুখ অবধি ঢেকে নারীদেরকে পুরুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকতে হবে -পুরুষদের পক্ষ থেকে আল্লাহ-পাক যদি এরকম আশংকা-বোধ করতেন এবং তিনি যদি নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্র ভিন্ন হউক তার প্রয়োজন অপরিহার্য মনে করতেন তাহলে হয়তো আল্লাহ-পাক নারী,পুরুষের কাউকে মঙ্গল গ্রহে এবং কাউকে পৃথিবী নামক গ্রহে পাঠাবার ব্যবস্থা করতেন । আসলে আমরা আমাদের অজ্ঞতা বশতঃ নারী- পুররুষকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছি কিনা- ভেবে দেখার সময় এসেছে। কিন্তু আল্লাহ-পাক পুরুষ ও নারীকে পরস্পরের পরিচ্ছদ বা পরিপূরক হিসেবে ঘোষনা করেছেন। ধর্মের প্রকৃত সৌন্দর্য ও এর  চিরন্তন আবেদন আমাদের অন্তরকে স্পর্শ করে নাই বিধায় আমরা বিকৃত রুচিবোধ সম্পন্ন। সৌন্দর্যকে বাদ দিয়ে প্রভুর পরিচয় লাভ সম্ভব কি?


আর্টিক্যালটির শিরোনাম আমি রেখেছি “আছিয়া মরিয়া গিয়া প্রমাণ করিল সে বাঁচিয়া গিয়াছে।”

আচ্ছা, আছিয়া যদি বেঁচে থাকতো, তাহলে কি আমরা তার জন্য এমন একটা  বাংলাদেশ তৈরি করে দিতে পারতাম,যেখানে বড় হয়ে সে পরিপূর্ণ অর্থবহ একটি সুন্দর জীবন-যাপন করার সুযোগ পেতো। পেতো না।কারণ নষ্ট হয়ে যাওয়া বিদ্যমান এই সমাজ-ব্যবস্থার পাশবিক শক্তিগুলোর উন্মত্ততায় তার জীবন আরো ভয়াবহ দূর্দশায় পরিণত হতো এবং তার শিশু বয়সের ঐ করুণ ট্রাজেডির ট্রমায় পিষ্ট হয়ে সে হয় আত্নহত্যা করতো নতুবা ক্ষয়িষ্ণু এই সমাজ ব্যবস্থার চাপে সে আরো বিপদগামীতার পথকেই বেছে নিত-ফলে জাহান্নামতার জন্য হয়তো অবধারিতই হয়ে যেত।।বরং এটাই ভালো হয়েছে,আল্লাহ-পাকএই স্বর্গের শিশুকে স্বর্গেই নিয়ে গেছেন।


আছিয়াকে তো আমরা বাঁচতে দিলাম না, পৃথিবী নামক স্বর্গে থাকতে দিলাম না।মেরে ফেললাম কিন্তু আরো কত আছিয়ার করুণ মৃর্ত্যু দেখার জন্য আমদের অপেক্ষা করতে হবে -সেটা সময়ের সিদ্ধান্ত। আল্লাহ-পাক পবিত্র কোরান মজিদে ঘোষণা করেছেন “যে ব্যক্তি বিনা কারণে একজন নিরীহ -নিরপরাধ ব্যাক্তিকে হত্যা করলো সে যেনো সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার মতো অপরাধ করলো।”একজন নিরীহ- নিরপরাধ লোককে হত্যা যদি সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার সামিলের মতো অপরাধ হয়,তাহলে আমাদের দেশে শুধুমাত্র ধর্ষনের মতো জঘন্য কর্মকান্ড দ্বারা প্রতিনিয়ত যে হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হলো তার অপরাধ কতো ভয়াবহ হয়েছে-তা’ আমরা কখনো চিন্তা করেছি ?ভেবেছি?একটি ভূমিকম্পে বা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শ-খানেক বা শ-দুয়েক লোক মারা গেলে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে যদি তাদের জন্য শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়,তাহলে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার মতো সমতুল্য অপরাধ যে সমস্ত বর্বর- পশুগুলোর দ্বারা সংঘটিত হলো, (বিশেষ করে স্বর্গীয়-শিশুগুলোকে  হত্যা করায়) -সেই নিরীহ-নিরপরাধ মানুষগুলোর স্মরনে আমরা কি করেছি?কোনো শোক-প্রস্তাব?জরুরী অবস্থা ঘোষণা? না কোনটাই করি নাই। বরংআছিয়ার মতো স্বর্গীয় শিশুদের লাশকে সামনে রেখে  এবং২০২৪ এর গণঅভ্যুথনের শহিদ পরিবারগুলোর আর্তনাদকে ভেংচিয়ে  আমরা  নানা আনুষ্ঠাকতায় নৃত্য করে ঈদ- উৎসব উৎযাপন করেছি।


হায়রে ধর্মীয় কালচার! হায়! মানুষের ধর্মবিশ্বাস! ঈদ উৎসব পালন করতেই হবে এতো লাশ সামনে রেখে! কিরূপে সম্ভব? ধর্মীয় নানা বিধি-বিধান,আচার -অনুষ্ঠানগুলো মানুষকে কি শুধু আত্নকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতাই শিক্ষা দেয়? মাঝে-মাঝে ভাবি,আমাদের নবীজী যদি এখন আমাদের মাঝে জীবিত থাকতেন, অথবা কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় ২০২৫ সালের  কোনো একটি  ঈদ পালনের জন্য নবীজীকে আল্লাহ-পাক বাংলাদেশে পাঠানোর বিশেষ ব্যবস্থা করতেন, তাহলে (২০২০-২০২৫) সালের অন্তত ধর্ষণ কর্মকান্ডের পরিসংখ্যানগুলো সামনে রেখে আমাদের  নবীজী কি আমাদেরকে নিয়ে এভাবেই ঈদ-উৎযাপন করতেন? ২০২৫ এর মার্চে আমরা যেভাবে ঈদ উৎযাপন করলাম! ঈদের মর্মবাণী সম্পর্কে উনি কি আমাদেরকে এই স্বার্থপরতাই,এই আত্বকেন্দ্রিকতাই শিক্ষা দিয়েছিলেন! হায় মুসলমান! ২০২৪ সালের গণহত্যায় শহিদদের,,আহতদের এবং তাদের স্বজনদের আর্তনাদকে তোমরা এমনি করে ভুলে গেলে! যদি ভুলে না যেতে  তাহলে ২০২৪ এর পর অন্ততঃ ২০২৫ সালের প্রথম ঈদটুকু তোমরা ২০২৪ এর শহীদদের স্মরণে,আছিয়াদের স্মরণে উৎসর্গ  করতে। ঐদিন দেশের সকল শিশু, কিশোর-কিশোরী,তরুণ -তরণী বৃদ্ধ -বৃদ্ধারা ঈদের আনন্দের অন্তত কিছুটা অংশ তাদের স্মরণে উৎসর্গ করতঃ তাদের প্রিয় জিনিসগুলো দেশের সুবিধাবঞ্চিত অসংখ্য  অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরন করে দিয়ে প্রভুকে বলতো “হে আমাদের প্রভু,আমাদের ক্ষমা করো- আমরা আছিয়াকে বাঁচতে দেইনি এবং ২০২৪ এর গণ-অভূথানের শহীদের এবং তাদের স্ব-জনদের সম্মান জানাতে ব্যর্থ হচ্ছি” -এবংসেটা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হলেই সবচেয়ে উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতো। মূলতঃ ধর্মের মূল মর্ম-বাণী এবং স্পিরিট আমরা হ্নদয়ে ধারণ করতে পারি নাই বলেই এতো মানুষের অশ্রু, দীর্ঘশ্বাস ও বুকফাটা আর্তনাদের সম্মুখে এরকম অন্তসারশূণ্য ঈদের আনন্দে আমরা গা ভাসাতে পেরেছি।কবে আমরা বুঝবো,যে আনন্দটা সবাই মিলে করতে পারি না, সেটা কোনো আনন্দ নয়।সবাই মিলে যে ‘ভালো থাকাটা’ থাকতে পারি না - সেটা কোনো ভালো থাকা নয়।যদি আমরা  এমন প্রেম-ভিত্তিক স্বর্গীয় সমাজ তৈরি করতে পারতাম,যদি ত্যাগের মহিমা ও মানসিকতা আমরা হ্নদয়ে ধারণ করতাম ও পরম স্রষ্টার প্রতিনিধি হওয়ার গৌরব আমরা অন্তর দিয়ে উপলব্দি করতাম,তাহলে  আল্লাহ-পাক আমাদের  প্রত্যেকটি পরিবারে  একটি করে হযরত ইউসুফ(আঃ) এর মতো আত্নশাসনে বিজয়ী বীর ও মহানায়ক পাঠাতেন। হিঠু শেখের মতো ধর্ষক পশুগুলো কোনো পরিবারে জন্ম নিত না। আছিয়া তোমার ভাগ্য ভালো,একটা প্রেমহীন,শ্রী-হীন,কুৎসিত- কদর্য বাংলাদেশ দেখার পূর্বেই মহান আল্লাহ তোমাকে স্বর্গে নিয়ে গেছেন। 

 

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে ধর্মের মূল মর্মবাণী ও ধর্মের মূল স্পিরিট হ্নদয়ে ধারণ পূর্বক  মহান আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হওয়ার সৌভাগ্য দান করুক।


             

লেখকঃ   মোঃআমিনুল ইসলাম

                        প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)

           রেলওয়ে পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা।

                                     ও

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকঃCreative Math. & Science Academy


কোন মন্তব্য নেই

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.